সমীক্ষা শব্দ থেকে আজকে লেখার উৎপত্তি। হোস্টেলের সেই রুমে বসে বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছি যেখানে দুই হাত প্রসারিত করলে দুই দেয়াল স্পর্শ করা যায়। খাটখানা পাতার পর একটুখানি দাড়ানোর জায়গা। এক কথায় সেই আয়াতাকার বাক্স যাতে করে,যার সাথে মিল খুব খেলনা ডাবলডেকার বাসের।রুমটা মূলত কিচেন, তাতেই খাট পেতে টেবিল রেখে বসবাসের আয়োজন। আলো বাতাস এইখানে নেই, মূলত নিজের সাথে দম আটকে বোঝাপরা যদি করা যায় আরকি।
বই বন্ধ করে কলেজ ড্রেস পরে নেই তাড়াহুড়ো করে।সময় নেই বেশি। আইডি কার্ড গলায় ঝুলিয়ে হোস্টেল থেকে বেড়িয়ে আসি। বেলা দুপুর। হাত ঘড়িতে সময় দেখতেও যেন আলসেমি তা নিয়েই চলছি কলেজের উদ্দেশ্যে। অল্প একটু পথের জন্যও রিকশা নিয়ে তাই আলসেমিকে প্রশ্রয় দেয়া হলো। ফার্স্ট শিফটের ছেলে মেয়েদের ছুটিরও সময়।এই দুই গলি পরই জ্যামে আটাকাল বলে।
ততক্ষনে মন সমীক্ষায় ডুবে যাওয়া যায় কত দূর! না জটিল কিছু না, প্রতিদিন কলেজে যাওয়ার ঠিক আগের গলিতেই ধুকে ধুকে ফুলে উঠতে থাকা কুকুরটার আয়ু সম্পর্কিত কঠিন কথা মাথায় ঘুর পাক খাওয়ার ব্যাপারও না। ও বেচারা যেন গ্রিক দেবতা প্রোমিথিইউসের মত দন্ড প্রাপ্ত। ক্রুশবিদ্ধ যার কলিজা ঠুকরে ঠুকরে খায় পাখিরা এবং পরেরদিন আবার তা তৈরি হয় ঠুকরে খাওয়ার জন্য। বলছিলাম-
একবিংশ শতাব্দীতে সবার যে মন তা আঁকাআঁকির ক্ষমতা হারিয়ে ভারি হয়ে উঠেছে তাতে সমস্যা হল কি?
মোবাইলের স্ক্রিন থেকে চোখ সরালে সোসাইটি আর নেচারের নিষ্ঠুর নিয়মের বিরুদ্ধে টিকে থাকার স্যারভাইভাল ক্ষমতাগুলো আরও একবার গড়ে তোলার শক্তি পাওয়া যায় না। স্ক্রিনে তাকিয়ে কোথায় যেন হারিয়ে থাকতে চাওয়ার চেতন এবং অচেতনের প্রবণতায় যে কোথাও হারিয়ে যাওয়া যায় না, এইটের পেতে ঢের দেরি হয়ে যায়।
কলেজের ক্যাম্পাসে ঢুকেই ক্যান্টিনের দিকে এগিয়ে গেলাম। এজকে কোন একটা ফেস্ট হচ্ছে।মাঠে নানান রকম স্টল দূর থেকে বুঝতে পারছি নাহ। আলসে চোখ ব্যানার পড়তে নারাজ। পাস্তা যে একটা চমৎকার জিনিস এইখানে এসেই আবিষ্কার করলাম। ত্রিশ টাকার পাস্তা কাটা চামচ দিয়ে বেশি আয়েশ করে খেতে খেতে, আর চারদিকে রব রব ছেলেদের হই হল্লা।
বলি যে - উৎসব মূলত সবাইকে নিয়ে আরেকটুখানি কলরব তুলে বাচার আয়োজন। তেমন নিজস্ব কিছু উৎসব থাকা প্রয়োজন যাতে এককিত্ব উদযাপন করা যায়। তা বলতে গেলে সেই ১৫ পাতার গল্প। যাই হোক,আমার আনন্দ উদজাপন সেই কবে করেছি একটা পরিপূর্ণ উৎসব। ছোটবেলা এইজন্যই সুন্দর যখন সবার সাথেই খুব মিলেমিশে থাকি তাই,তখন উৎসবগুলো সত্যিকারের হয়। বড় হতে হতে অনেক মানুষ চলে যায় হাটি হাটি পা পা করে। ঘুম এবং পরপার। আবার হয়তবা ঘুম এবং ঘুম। বড় হতে হতে সবাই একা হয়ে যায় উৎসবগুলো এখন আর হয় নাহ।কেবল থাকে অইসব দিনে অলসতার উদযাপন আর দশটা দিনের মতই। শুধু নতুন থাকে আনুষ্ঠানিকতা।
একবিংশ শতাব্দীতে এসে এইসব ধূসর পান্ডুলিপি পড়ে কারে শুনাই? কারণ বললে তারা শুনে হাই তুলে প্রেমহীন চোখে ঘুম নিয়ে বলবে একটু ঘুমাই। কারণ মনে অনেকদিন আঁকতে ভুলে গেছে।
পাস্তাটা চমৎকার। ডাস্টবিনে ওয়ান্টাইম বক্স ফেলে ধীর পায়ে আগাই। দুধারে গাছের শারি, ঝিরিঝিরি শব্দ।
বাহি:জগতে জনম জনম একটু কিছু খুজতে গিয়ে, আছরে পরে নদীর পাড়ে আর অচেতন হয়ে এইবার পূর্ণ চেতনে দেখে সবটুকুই।
অনেকদিন সেই সব একান্ত উৎসবের আয়োজন করি নাহ ঘটা করে! পাতার ঝিরিঝিরি শব্দ তাই মনে করিয়ে দেয়। দূর থেকে ঘন্টার শব্দ ভেসে আসে। তাড়া দেয়, অল্প একটু জীবন। তাইত কত তাড়াহুড়ো। কিসের জন্য এত তাড়াহুড়ো?